জীবনে চলার পথে আমাদের জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যা হয়তো আমরা কল্পনাও করতে পারি না। এরই মধ্যে এমনই কিছু ঘটনা ঘটে যায়, যা আমরা কাউকে বলতে পারি না। কারণ আধুনিকযুগের বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজ আমাদের কথা বিশ্বাস করবে না। তাই নিজের সাথে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা আর কারো সাথে শেয়ার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

অলৌকিক ঘটনা সত্যিই ঘটে কিনা, হয়তো আমরা কেউই বলতে পারবো না। কিন্তু ঘটনা যার সাথে ঘটে, সেই এর সাক্ষী হয়ে থাকে। সুতরাং যার সাথে এই ঘটনা ঘটে, সে হয় পৃথিবীতে থাকে না, না হলে তাদের কথা আমরা বিশ্বাস করি না।

কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি। আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন, আপনার সাথে ঘটে যাওয়া কোনো অভিজ্ঞতা। আমরা অবশ্যই চেষ্টা করবো, আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করার। এরজন্যই আমরা নিয়ে এসেছি, “Bong Storyline”।

আজকের গল্প “অলৌকিক ব্যক্তি”। অবশ্য এটি কোনো গল্প নয়, সত্য ঘটনা। এরই সাথে আপনাকে বলে রাখি, আমরা কিন্তু কোনোরকমভাবে অলৌকিক ঘটনাকে প্রাধান্য দিচ্ছি না। শুধুমাত্র সত্য ঘটনা আপনার সাথে শেয়ার করছি। বিশ্বাস করা বা না করা, সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। গল্প কালেকশনে রয়েছেন কল্যান সাহা এবং সম্পাদনায় রয়েছেন রুপন নাথ।





পর্ব - 1
“অলৌকিক ব্যক্তি”

ঘটনাটি ঘটে আমাদের সদস্য কল্যান সাহা’র কলিগের সাথে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা আমরা আপনার সাথে শেয়ার করছি।

ওই ব্যক্তি নিজের ঘটনা শেয়ার করেছেন।

ঘটনাটি ঘটে আজ থেকে বছর দুয়েক আগের, 2019 এর প্রথম দিকের কথা। কল্যাণ সাহার কলিগ পেশায় ড্রাইভার। সে একদিন রাতে পেসেন্ট নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা হচ্ছিলো। আপনাকে জানিয়ে দিই, হসপিটালটি পশ্চিম মেদিনীপুরে অবস্থিত এবং ঘটনাটি ঘটে চন্দ্রকোণা রোডের আশেপাশে। এই ড্রাইভারের সাথে পেসেন্ট তো ছিলোই, সাথে ছিলো কিছু স্বাস্থ্যকর্মী। তারা যে রোড দিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা হচ্ছিলো, সেই রাস্তাটা যথেষ্টই খারাপ। যার জন্য একটি লড়ির চাকা রাস্তার কোনো একটি ভাঙা অংশে পড়ে যায় এবং লড়ি আটকা পড়ে থাকায় মিনিট কয়েকের মধ্যেই রাস্তা জ্যাম হয়ে যায়।  

তাই তারা এই রাস্তাটা বাদ দিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করলো। যথারীতি তারা তারা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যাত্রা শুরু করলো।

কিন্তু ওই রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় 2 কিমি যাওয়ার পর তারা এক অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলো যে, তাদের গাড়ি যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, তার আগে পিছে কোনো গাড়ি নেই। মেইন রোডে জ্যাম থাকার জন্য কিছু গাড়ি তো এদিক দিয়ে যাবে, কিন্তু এদিকে দিয়ে একটাও গাড়ি যাচ্ছি না!! তারা একটু অবাক হলো, কিন্তু তেমন গুরুত্ব না দিয়ে গাড়ি চলতে লাগলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

 রাস্তা ভালো নয়, তাই গাড়ি 20-30 এর উপর চালানো সম্ভব ছিলো না। মোটামুটি 3-4 কিমি দূরেই হঠাৎ কল্যাণ সাহা’র কলিগ তথা ড্রাইভার দেখতে পেলো রাস্তার ডানদিকে একটা বাড়ি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার দুই পাশে দুটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। আবার তারই সামনে একটা লোক দাঁড়িয়েছিলো। লোকটার পোশাক দেখে মহামেডান বলেই মনে হলো। দূর থেকে অতো ভালো করে দেখা গেলো না।ড্রাইভার আপন মনেই তার পাশে বসে থাকা তার কলিগকে বলে বসলো, ফাঁকা মাঠে একটাই বাড়ি, তার সাথে দুটো গাড়ি। এত অন্ধকারে লোকটা একা দাঁড়িয়ে কি করছে?

ড্রাইভারের পাশে থাকা কলিগ সেই দিকে তাকিয়ে বললো, কোথায় লোক? আমি তো কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না। এই শুনে ড্রাইভার একটু ভয় পেলো, তবে নিজেকে শান্ত রেখে বললো, হতে পারে সে ভুল দেখেছে। যাই হোক, গাড়ি হসপিটালের দিকে ছুটতে লাগলো।

হঠাৎ করেই ড্রাইভার গাড়ির সামনে একটা লোককে রাস্তা পার হতে দেখলো। কিন্তু লোকটার মুখ দেখে ড্রাইভার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। কারণ, এই লোকটাই তো সেই লোকটা যাকে সে কিছুক্ষণ আগেই বাড়ির সামনে দেখেছিলো। এটা কি করে সম্ভব?

তাদের গাড়ির আগে পিছে তো কোনো গাড়ি ছিলো না, আবার কোনো গাড়িকেই ওভারটেক করতেও দেখা যায়নি। তাহলে এই লোকটা এখানে এলো কি করে?

এবার ড্রাইভার তার কলিগকে বললো যে, এবার লোকটাকে দেখা যাচ্ছে কিনা। কিন্তু তার কলিগের উত্তর শুনে ড্রাইভার একটু ভয় পেলো। কারণ, তার কলিগ নাকি কোনো লোককে দেখতেই পাচ্ছে না।

এবার ড্রাইভার মনে মনে ভীতগ্রস্থ হলেও মনে সাহস নিয়ে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে নীচে নেমে এলো। আসলে সে জানতে চেয়েছিলো, তার সাথে আসলে কি ঘটছে? প্রায় মিনিট পাঁচেক দাঁড়ানোর পর, তার কলিগ বলে উঠলো, কি ব্যাপার নিচে দাঁড়িয়ে কেন? পেসেন্টকে নিয়ে যেতে হবে তো তাড়াতাড়ি। কিছু হয়েছে নাকি? ড্রাইভার বললো, সমস্যা তো একটু হয়েছে। তেমন কোনো ব্যাপার না, চলুন। এই বলে গাড়িতে উঠতে উঠতে আবারও সে ওই লোকটাকে পার হতে দেখলো। আবারও সে তার কলিগকে বলে উঠলো, এবার দেখতে পেয়েছেন? এই লোকটাকেই আমি ওই বাড়িটার সামনে দেখেছিলাম। তার কিছুক্ষণ পর রাস্তা পার হতে দেখলাম। আবার এখন রাস্তা পার হচ্ছে।

এবার তার কলিগ তার কথা শুনে সেদিকে দেখলো, কিন্তু এবারেও কিছু দেখতে পেলো না। কিন্তু পেসেন্ট তাদের কথা শুনে পিছন থেকে বলে উঠলো, তাড়াতাড়ি উঠুন গাড়িতে আর চলুন এখান থেকে। ড্রাইভার তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসলো, এবং পেসেন্টকে জিজ্ঞেস করলে জানায়, সেও এখনো কিছু দেখতে পায়নি। তবে সে জানায়, মানুষ একবার ভুল করতে পারে, দু’বার ভুল করতে পারে। কিন্তু বারংবার কি করে একই ভুল করতে পারে?

সুতরাং ড্রাইভার আর কথা না বাড়িয়ে, গাড়ি যতটা দ্রুত সম্ভব যেতে লাগলো। আগেই বলেছি, রাস্তা ভালো নয়, তাই ইচ্ছে থাকতেও দ্রুত যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

কিছুদূর যাওয়ার পর আবারও সেই লোকটাকে রাস্তা পার হতে দেখা গেলো। এবার সে কলিগকে যখন জিজ্ঞেস করলো, তখন সে জানায়, এবার সে ওই লোকটাকে দেখতে পেয়েছে। লোকটা রাস্তা পার করে জঙ্গলের দিকে যেতে যেতে কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো।

এবার তারা এই রাস্তা পার করে যখন মেইন রোডে এসে চায়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো, তখন পিছন থেকে অনেকগুলো গাড়ি তাদের গাড়িকে ওভারটেক করে চলে যেতে লাগলো। ওই চায়ের দোকানে থাকা লোকগুলোর থেকে জানা যায়, ওখানে ড্রাইভার বেশিক্ষণ দাঁড়ায়নি একদিকে ভালো করেছে। ওখানে নাকি এইরকমই অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শোনা যায়।

আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো এই চন্দ্রকোণা রোডের সম্পর্কে জানেন। যাই হোক, সেই থেকে ওই ড্রাইভার আজ পর্যন্ত ওই রোডে যাওয়ার কথা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না।   

আমরা জানি না, সেই দিনের ঘটনা আসলেই সত্যি নাকি ভুল? এর পিছনে যে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তিও হার মেনে যায়।

আজকের প্রথম পর্ব আপনার কেমন লাগলো, তা কমেন্ট করে জানান। আর আপনিও নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন আমাদের সাথে। আপনার অভিজ্ঞতা লিখে পাঠান যোগাযোগ বক্সের মাধ্যমে।