রাত দুটো বাজতে চললো।
বিরাট মেঘালয় ও আসাম বর্ডারের কাছে কৃষ্ণই নদী পার করছিলো। চারপাশে অন্ধকার। এক প্রকার নিঃঝমতা কৃষ্ণই নদীকে ঘিরে রেখেছিলো। যার উপর দিয়ে কালো মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছিলো। যা দেখে মনে হবে, যখন তখন তা বৃষ্টির আকারে ঝমঝমিয়ে নেমে পড়বে। কৃষ্ণই নদীর জল আপন গতিতে নিজের গন্তব্যস্থলে এগিয়ে চলছে।
বিরাটের হাতে টর্চ ছিলো আর এক হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেল। প্যাডেল করে বিরাট নদী পার করছিলো। ঠিক তখনই তার ফোন বেজে ওঠে। সে ফোন ধরেই বললো, হ্যাঁ বন্দনা, বলো। মোবাইলের ওপার থেকে এক মহিলার কণ্ঠস্বর ভেসে উঠলো।
“কতদূর পৌঁছালে?”
“কষ্ণই নদী পর্যন্ত চলে এসেছি বন্দনা। কৃষ্ণই নদী পার করলেই বাড়ি পৌঁছে যাবো। তারপরেই তোমার কাছে।”
নন্দনার কাপালে স্পষ্ট চিন্তার ভাঁজ দেখা গেলো, “কি বললে? তুমি কৃষ্ণই নদীয় দিয়ে আসছো?”
“তো কি হয়েছে? তুমি তো জানোই বাংলামোরা গ্রাম থেকে রংকাভূজা গ্রামে যেতে হলে তো এই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে।”
“তোমার এত রাতে ওই রাস্তা দিয়ে আসা উচিত হয়নি। তোমার গ্রেভিয়ার্ড কোঠিতেই থেকে যাওয়া উচিত ছিলো। তুমি তো জানোই নদীর আশেপাশে ও ঘুরে বেড়ায়।”
বিরাট আশ্চর্য হয়ে বললো, “ও ঘোরে মানে?”
“তুমি সব জানো। তুমি ইচ্ছে করে বলো। মা বারবার করে বলেছিলো, রাতে একদম নদীর ধারে যাওয়া উচিত নয়। আর সেই সময় তার নাম নিতে নেই। নাহলে সে সত্যিই চলে আসবে।”
“বন্দনা! মা মনে হয় তেমাকেও যোক্ষিনীর কাহিনী…..”
কথা শেষ করার আগেই বন্দনা ঘাবড়ে বলে, “চুপ হয়ে যাও। হে মা কালি আমার স্বামীকে রক্ষা করো।”
বিবাট হেসে বললো, “আরে বন্দনা, যোক্ষিনী বলে কিছু হয় না।” এই সব মনগড়া কাহিনী।”
“তুমি এই সব মানো বা না মানো। আমি তো মানি। তুমি বাড়ি ফিরে এসো শিগ্গির।”
“হ্যাঁ বন্দনা। আমি এখুনি আসছি। নদী তো পার করে নিই।”
“ঠিক আছে এসো। রাখছি।”
“আরে বন্দনা, ফোন রাখলে হবে। তুমি কিছু একটা ভুলে যাচ্ছো না?”
“আমি আবার কি ভুললাম?”
“যক্ষিনীর কথা মনে রাখতে পারো। আর আমাদের যে আজকে বিবাহবার্ষিকী সেটা মনে রাখতো পারো না।”
“স্যরি বাবা। ভুল হয়ে গেছে।”
বিরাট অভিমান করে বলে, “ভুলে গেছো না? ভুলে গেছো যখন তখন সাজা তো পেতেই হবে।”
বন্দনা প্রেমের ছলে বললো, “কি সাজা দেবে শুনি?”
বিরাট বললো, “তোমার সাজা হলো, তোমাকে আজ সারা রাত জাগতে হবে।”
বন্দনা লজ্জা পেয়ে যায়। আর বলে, ,“কি সব কথাবার্তা বলছো?”
বিরাট বললো, “আরে আমার স্ত্রীর সাথে এই রকম কথা বলবো না তো কার সাথে বলবো?”
“ঠিক আছে বাবা! তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ি এসো।”
এই বলে ফোন রেখে বিরাট সাইকেল নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।
একটু এগিয়ে যেতেই বিরাটের মনে হলো, পিছনে কোনো এক নুপুরের শব্দ বেজে উঠলো। যেন মনে হলো, কোনো এক নারী দৌড়ে এপাশ থেকে ওপাশে চলে গেলো। বিরাট নুপুরের শব্দ শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো। এবং পিছন ফিরে দেখলো। কিন্তু সেখানে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই সে দেখতে পেলো না।
“এই বন্দনাও না। আমাকে শুধু ভয় দেখায়। দক্ষিনীর কথা বলে আমাকে ভয় পাইয়ে দিলো।
আর তাছাড়া আমি নিজেও তো দক্ষিনীকে দেখতে চাই। দেখি কি রকম দেখতে সে! শুনেছি সে নাকি খুব সুন্দরী সে।” এই বলে বিরাট সামনের দিকে এগোতে লাগলো।
কিন্তু কিছুদূর এগোতেই বিরাট অন্ধকারের মধ্যে একটি ছায়ামূর্তি দেখতে পেলো। ছায়ামূর্তি দেখে মনে হলো, সে মনে হয় বিরাটের জন্য অপেক্ষা করছিলো। ছায়ামূর্তির থেকে নূপুরের শব্দ ভেসে এলো। এবং সুন্দর গন্ধ নির্গত হতে লাগলো। বিবাট ভীতগ্রস্থ হয়ে বললো, “বন্দনার কথা সত্যি হলো না তো? এ দক্ষিনী না তো?
বিরাট ওই ছায়ামূর্তি দেখে এতটাই ভীতগ্রস্থ হয়ে পড়লো যে, তার পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেলো। তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। সে ভীতগ্রস্থ কণ্ঠে বললো, “কে ওখানে?”
কোনো শব্দ এলো না। বিরাট মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে ওই ছায়ামূর্তির দিকে ফেললো। টর্চের আলো পড়তেই ওই ছায়ামূর্তি এক যুবতীর। নদীর কিনারায় খুব সুন্দরী এক যুবতী দাঁড়িয়ে আছে। যার বয়স কেবল 24 - 25 বছর। যার উচ্চতা পাঁচ ফুট মতো। তার লম্বা ও খোলা চুল, ফর্সা শরীর ও ফর্সা মুখ অন্ধকারেও যেন জ্বলজ্বল করছে। লাল বর্ণের রক্তাক্ত ঠোঁট। কালো শারি ও লাল ব্লাউজ পরিধান করে ছিলো ওই যুবতী। ওই যুবতী কোনো অংশে অপ্সরার থেকে কম নয়।
এত সুন্দরী ছিলো ওই যুবতী, যাকে দেখে যে কোনো পুরুষ তার রূপের মহিমায় পাগল হয়ে যাবে। উন্মত্ত হয়ে যাবে কাম বাসনায়।
ওই যুবতী, হাতের ইশারায় বিরাটকে কাছে ডাকে।

0 Comments