অপরদিকে টাইপরাইটারের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কোর্ট প্যান্ট পড়া এক ব্যক্তি চোখে চশমা লাগিয়ে দরজা বন্ধ ঘরে কাহিনী টাইপ করে চলেছে। তার চারপাশে বুকসেল্ফ এবং প্রতিটি বুকসেল্ফ বইতে পরিপূর্ণ। সেখানে প্রায় হাজার খানেক বই রয়েছে। 

টেবিলের এক কোণায় অ্যাস্ট্রে ছিলো। যার উপর কিছু আধপোড়া আবার কোনোটা আধজ্বলা সিগারেট পড়ে রয়েছে।

লেখক নিজের মনে বলে, “এই পার্ট তো শেষ তো হলো।” পরের পার্টে বন্দনা তার স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে। ওই পার্টে যক্ষিনীর অভিশাপের কথা জানা যাবে এবং যক্ষিণীর মুক্তি হবে। তবে এতে লেখকের কষ্ট হবে ঠিকই। কিন্তু মৃত্যু না হলে যে horror কাহিনী জমবে না।”

এই বলে লেখক সিগারেটের টান দিলো। সে তার মোবাইল থেকে ফোন করতে থাকে। 

ফোনের ওপার থেকে হাই তুলতে তুলতে এক ব্যক্তি বললো, “হ্যালো!  কে?”


“হ্যালো জগদীশ। আমি বলছি। কাহিনী শেষ হয়ে গিয়েছে।”


“ও আচ্ছা! আপনি বলছেন স্যার? কি বললেন স্যার? আপনার কাহিনী লেখা শেষ হয়ে গেছে? এ তো খুব ভালো কথা! কিন্তু, এই কথা তো আমাকে দিনেও বলতে পারতেন। কিন্তু রাতে কেন ফোন করলেন স্যার?”


লেখক সিগারেট টেনে বললো, “কি বললে? এত রাতে? কটা আর বাজে…..” বলতে গিয়েই তার চোখ পুরনো হাত ঘড়ির উপর পড়ে। যেখানে সে দেখতে পায়, তখন বাজে রাত 3 টে বাজতে পাঁচ মিনিট।


লেখক নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলে, “আরে তিনটে বেজে গেছে! এত রাত হয়ে গেছে? আমি তো মনে করেছি রাত 8টা 9টাই বাজে।”


“কোনো ব্যাপার না স্যার। আপনি এত মন দিয়ে গল্পগুলো লেখেন যে আপনি সময় টেরই পান না।”


“হ্যাঁ। ঠিক বলেছে। তবে এই গল্প পাবলিস হলে লোকেদের খুব পছন্দ হবে। রাত জেগে যে লিখছি!”


“সে তো অবশ্যই হবে। আপনার লেখা বলে কথা!” একটু থেমে ওই ব্যক্তি বললো, “আচ্ছা আপনি যে গল্প লিখছেন, তার নাম কি দিয়েছেন?”


“গল্পের নাম যক্ষিণী - এক পিশাচিনী।”


লেখকের কথা শুনেই মোবাইলের ওপারের ব্যক্তি অবাক হয়ে বললো, “কি বললেন স্যার? যক্ষিণী?” 


“হ্যাঁ। যক্ষিণী। তো এতে অবাক হচ্ছো কেন?”


“না মানে আমি শুনেছিলাম যে, আপনি যে যক্ষিণীর কথা বলছেন, সে নাকি আপনাদের গ্রামের কৃষ্ণই নদীর আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। আর পুরুষদের সাথে ওইসব….মানে ওই সমস্ত উল্টোপাল্টা কাজ করে মেরে ফেলে।”


“তো কি হয়েছে?”


“না মানে আপনার ভয় করে না স্যার? যে গ্রামে যক্ষিণী ঘুরে বেড়ায়, আর ওখানে বসেই তার উপর আপনি গল্প লিখছেন। আপনার যদি কোনো ক্ষতি করে?”


“জগদীশ! যক্ষিণী অতটাও খারাপ নয়, তুমি আর তোমাদের গ্রামের লোকেরা যতটা মনে করো।”


“মানে?”


“মানে যক্ষিণীরা খুব ভালো হয়। যারা অন্যের খুশির জন্য নিজেদের সবকিছু দিয়ে দিতে পারে। কিন্তু জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার জন্য পুরো জীবনটাই বদলে যায়।”


“কেমন ঘটনা স্যার? আমি ঠিক বুঝলাম না।”


“পৌরাণিক কথানুসারে, আমাদের ব্রহ্মাণ্ডে অনেক লোক রয়েছে। যেখানে দেবী দেবতা, অসুর, রাক্ষসের বাস রয়েছে। এই সমস্ত লোক ‍পৃথিবী থেকে আলাদা দূরত্বে অবস্থা করছে। বলা হয়, এই সমস্ত লোকের মধ্যে বিষ্ণুলোক সবথেকে উপরে অবস্থান করছে। আর সবথেকে নিচে অবস্থান করে অপ্সরা, যক্ষিনী, পরী যারা পৃথিবীর একদম কাছে অবস্থান করে। যে লোক পৃথিবীর সবথেকে কাছে অবস্থান করে, সেই লোকের দেবী দেবতাকে পুজো করলে সেই লোকের দেবী দেবতা শীঘ্রই প্রসন্ন হয়।”


জগদীশ লেখকের কথা থামিয়ে বলে, “এমন কেন স্যার? ওই লোকের দেবী দেবতা এত তাড়াতাড়ি প্রসন্ন কেন হয়?” 


“কারণ, নিয়মিত সঠিক নিয়মে ও সঠিক মন্ত্রের দ্বারা সাধনা করলে ওই দেব দেবীদের কাছে তরঙ্গ তাড়াতাড়ি পৌঁছায়। যক্ষ যক্ষিণী লোকের এক যক্ষিণী দ্বাপরযুগের অন্তিমে পৃথিবীতে এসেছিলো। যাকে নাকি অভিশাপ দেওয়া হয়েছিলো। এমন এক অভিশাপ যা তার জীবন বদলে দেয়।”


“কেমন অভিশাপ স্যার? আপনি কোন অভিশাপের কথা বলছেন? কেই বা দিয়েছিলো ওই অভিশাপ?”




আসলে যক্ষিণীকে একটা অভিশাপ দেওয়া হয়েছিলো। কি ছিলো সেই অভিশাপ? কেনই বা দেওয়া হয়েছিলো অভিশাপ।