রোদ ঝলমলে দুপুরে কলেজের বারান্দায় দুই বান্ধবী, রমা ও তৃপ্তি, দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের শরীরে সাদা শাড়ি, পায়ে সাদা মোজা—যেন শুদ্ধতার প্রতীক।

সেদিন কলেজে বার্ষিক সাংস্কৃতিক উৎসবের প্রস্তুতি চলছিল। চারদিকে ব্যস্ততার আমেজ, কিন্তু রমা ও তৃপ্তি যেন অন্য জগতে হারিয়ে গিয়েছিল।

রমা ক্লাসের বই খুলে পড়ছিল, আর তৃপ্তি তার পাশে বসে এক অদ্ভুত অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হচ্ছিল। রমার মনোযোগী চোখজোড়া, তার নিখুঁত ভঙ্গি—সবকিছু যেন তৃপ্তির ভেতরে এক অজানা আলোড়ন তৈরি করছিল।

তৃপ্তি হঠাৎ রমার বইটি বন্ধ করে তার হাত চেপে ধরল। রমা অবাক হয়ে তাকাল, “কি হলো?”

তৃপ্তি নিঃশব্দে হাসল, চোখে এক অনির্বচনীয় দৃষ্টি। “আজ আমরা সব বাধা ভুলে যাবো, রমা।”

রমার শ্বাস ভারী হয়ে উঠল। কিছু একটা বলতে চেয়েও যেন আটকে গেল। তৃপ্তি ধীরে ধীরে রমার কাঁধ ছুঁয়ে দিল, তারপর তার সাদা শাড়ির আঁচল ধরে টান দিল।

রমা কেঁপে উঠল, কিন্তু সে বাধা দিল না। শাড়ির ভাঁজ খুলে যেতে লাগল, বাতাসে তার নরম চামড়ার পরশ ছড়িয়ে পড়ল। তৃপ্তির আঙুল তার ঘাড় ছুঁয়ে গেল, তারপর ধীরে ধীরে নামতে থাকল।

পাশের জানালা দিয়ে হালকা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল। তৃপ্তির চোখে অদ্ভুত এক দীপ্তি। একসময় রমার শরীর থেকে সমস্ত শাড়ির বন্ধন খুলে পড়ল, একমাত্র রয়ে গেল সাদা মোজা।

তৃপ্তি ধীরে ধীরে রমার দিকে এগিয়ে এল, তার আঙুলের ছোঁয়া যেন বিদ্যুতের স্পর্শ। রমা শিহরিত হয়ে উঠল, তার হৃদস্পন্দন দ্রুততর হয়ে গেল। চারপাশের জগৎ যেন হারিয়ে গেল, কেবল তাদের দুইজনের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছিল।

ঝর্ণার কাছাকাছি এসে তারা দুজনেই একে অপরকে দেখে হাসল, যেন এটাই স্বাভাবিক। রমা অনুভব করল, এ এক অভিজ্ঞতা যা সে আগে কখনো ভাবেনি।



তৃপ্তি তার হাত ধরে বলল, “তুই মুক্ত হতে চেয়েছিলি, তাই না?”

রমা চোখ বন্ধ করল, তারপর মাথা নাড়ল। “হ্যাঁ…এটা অন্যরকম।”

তারা একসঙ্গে ঝর্ণার জলে নেমে পড়ল, হালকা তরঙ্গ তাদের শরীর ছুঁয়ে গেল। বাতাসে এক ধরনের সুর বাজছিল, যেন প্রকৃতিও তাদের সাথে একাত্ম হয়ে উঠেছে।

দুজনেই দীর্ঘক্ষণ ঝর্ণার জলে দাপাদাপি করল, বাতাসে ঘুরে বেড়াল, তারপর ক্লান্ত হয়ে গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়ল। শরীরে এখনো কেবল সাদা মোজা রয়ে গেছে, আর কিছুই নেই।

সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ছিল, আকাশ লাল-সোনালি আভায় রাঙা হয়ে উঠেছিল। রমা চোখ খুলে তৃপ্তির দিকে তাকাল। “আমরা কি ফিরতে পারবো?”

তৃপ্তি হেসে বলল, “ফিরতে হবে, কিন্তু আজকের এই মুহূর্ত আমাদের জীবনের জন্য পাল্টে দিল।”

তারা ধীরে ধীরে নিজেদের জড়িয়ে ধরল, যেন সময়টা ধরে রাখতে চায়। তারপর একসঙ্গে উঠে দাঁড়াল, শাড়ি জড়াল, কিন্তু মনে হলো, আজ তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ।

তারা একে অপরের হাত ধরল এবং কলেজের পথে হাঁটতে লাগল, মনে মনে জেনেই যে, জীবনের পথে তারা কোনো বাঁধনকে আর শৃঙ্খল মনে করবে না, বরং প্রতিটা মুহূর্তকে উপভোগ করবে মুক্ত পাখির মতো।