তেরো বছর পর….


ট্রেন লাইনের উপর দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে। ঠিক যেমন আমাদের জীবন ছুটে চলে। তবে দুটোর মধ্যে একটাই প্রার্থক্য, ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ায় কিন্তু আমাদের জীবন কখনোই থেমে থাকে না, যতক্ষণ না জীবন শেষ হচ্ছে। 

যুগ, যার বয়স 26 বছর, ফর্সা গায়ের রং, চেক শার্ট, কালো প্যান্ট পড়ে window site এ বসেছিলো। কানে হেডফোন দিয়ে হিন্দু পুরাণ অফিসিয়াল চ্যানেলে হিন্দু পুরাণের বিভিন্ন রকম অজানা তথ্য শুনতে শুনতে মেঘালয়ের গাঢ় পাহাড়ের অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করতে করতে জানলার সাইটে বসে যুগ নিজের মতো যাচ্ছিলো। 

পাহাড়ের উপর দিয়ে উড়ন্ত মেঘ দেখে মনে হচ্ছিলো, পাহাড়ের চূড়া সাদা চাদর দিয়ে মুড়ে রেখেছে। ওই সমস্ত দৃশ্য দেখতে দেখতে যুগের চোখ বন্ধ হয়ে যায়। 


সবে মাত্র যুগের চোখে ঘুম নেমেছে, তার মনে হলো, কেউ যেন তার হাত স্পর্শ করছিলো, কেউ যেন তার হাত স্পর্শ করে হাত নাড়াচ্ছিলো। যুগের আচমকা ঘুম ভেঙে যায়। যখন যুগের ঘুম ভাঙলো, সে দেখলো তার সামনে এক বৃদ্ধ বসেছিলো। যে বড়ো বড়ো চোখ করে তার দিকে তাকিয়েছিলো। যে হালকা ধুলো মাখা ধুতি পড়ে বসেছিলো। যার হাত পা কাঁপতে থাকে। 


যুগ মনে মনে ভাবতে থাকে, এই বুড়ো তো এতক্ষণ এখানে ছিলো না। তার সামনের সীট তো পুরোপুরি খালি ছিলো। হঠাৎ এই বুড়ো লোকটা কোথা থেকে এলো? কিছুক্ষণের মধ্যেই যুগ নিজের মতো করে উত্তর তৈরী করে নেয় এবং মনে মনে বললো, হয়তো আমি যখন ঘুমাচ্ছিলাম, তখনই হয়তো এসেছে। 


যুগ এবার গম্ভীর গলায় বললো, “এটা কেমন হলো দাদু?”


বৃদ্ধ কাশতে কাশতে বললো, “কি করি বলো বাবা? তোমার সাথে কিছু দরকার ছিলো। এরজন্য তোমাকে ডাকতে হলো।”


যুগ অবাক হয় প্রশ্ন করে, “দরকার? তাও আবার আমার সাথে? কি দরকার?”


বৃদ্ধ বললো, “আমি জানতে চেয়েছিলাম, এখন ক’টা বাজে?”


যুগ অবাক হলো এবং ক্রোধান্বিত হয়ে বললো, “এখন এগারোটা বাজতে চললো।”


বৃদ্ধ হাসিমুখে বললো, “ও আচ্ছা। তার মানে এক ঘন্টা পর আমার স্টেশন চলে আসবে।”


যুগ কোনো উত্তর দিলো না, বিরক্তের সাথে বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকলো। বৃদ্ধ প্রশ্ন করলো, “বাবা, তুমি কোথায় যাচ্ছো?”


যুগ ইতঃস্তত হয়ে বললো, “আমি মেধনিপাথাল যাচ্ছি।”


বৃদ্ধ বললো, “ও আচ্ছা। তুমিও মেধনিপাতাল যাচ্ছো?”


যুগ অবাক হয়ে বললো, “মানে আপনিও?”


বৃদ্ধ বললো, “যাক! এবার জার্নি আরামশে হয়ে যাবে। যখন কথা বলার লোক পাওয়া যায় না, তখন জার্নি এমনিই শেষ হয়ে যায়। তুমি মেধনিপাতালে কোথায় যাচ্ছো?”


“মেধনিপাতাল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাংলামোড়া গ্রাম রয়েছে। আমি ওখানেই যাচ্ছি।”


“বাংলামোড়ায় কি তোমার কি কোনো আত্মীয় রয়েছে?”


“না! বাংলামোড়াই তো নেই, তবে রংকামুচা গ্রামে রয়েছে।”


“আরে এটা আবার কেমন কথা? যেখানে তোমার আত্মীয়রা রংকামুচা গ্রামে থাকে, তখন তুমি বাংলামোড়া গ্রামে কেন যাচ্ছো?”


এই কথা শুনে যুগ চুপ হয়ে যায়। মনে হলো যেন ওই বৃদ্ধ যুগের ইমোশনে আঘাত করেছে। হয়তো এমন প্রশ্ন করে বসেছে, যা হয়তো যুগ নিজেও নিজের কাছে উত্তর দিতে চায় না।


বৃদ্ধ নিজের কথা continuity বজায় রেখে বলে, “চলো যদি না বলতে চাও তো ছাড়ো। বাংলামোড়ায় তুমি কোথায় থাকতে চাও বাবা?”


“বাংলামোড়ার বাইরে যে graviyard কোঠি রয়েছে না, ওখানেই আমি থাকবো।”


ওই বৃদ্ধ হতবাক হয়ে বললো, “ওই ইংরেজদের আমলে তৈরী হওয়া কোঠি? যেটা কবর স্থানের উপর তৈরী করা হয়েছিলো?”


“হ্যাঁ ওই কোঠিতেই থাকবো।”


“কিন্তু ওই কোঠি তো প্রায় 13 বছর ধরে বন্ধ রয়েছে না?”


“হ্যাঁ রয়েছে। তবে আর বন্ধ থাকবে না। আমি আজ রাতই ওই কোঠিকে খুলবো।”


“না বাবা। এমন করো না। তুমি কি ওই কোঠি সম্বন্ধে জানো না?”


“না আমি জানি না। আপনি কি আমাকে পরিষ্কার করে বলতে পারবেন?”


“যদি তুমি ওই গ্রামে ছোটো থেকে থেকে থাকো, তাহলে তো তোমার এইটুকু জানার কথা যে, ওখানে যক্ষিনী কৃষ্ণই নদীর আশেপাশে ঘুরে বেড়াতো।”


যুগ বৃদ্ধের কথার উত্তর দিলো না। সে বৃদ্ধের কথা মন দিয়ে শুনতে লাগলো, “তুমি কি জানো, যক্ষিনীর দুটো ঠিকানা ছিলো। এক কৃষ্ণই নদী আর একটা graveyard কোঠি।”


যুগ আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে, “কি? graveyard কোঠি?”


“হ্যাঁ, graveyard কোঠি। গ্রামের লোকেরা বহুবার যক্ষিনীকে graveyard কোঠির আশেপাশে ঘুরতে দেখেছে। যক্ষিনী প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবস্যা রাতে পুরুষদের সাথে সংভোগ করে তাদের heart চুষে মেরে ফেলতো।”


“তার মানে আমার বাবা ছোটোবেলায় যেগুলো বলতো, সেইগুলো কি তাহলে গল্প নয়? সত্যি ছিলো?”


বৃদ্ধ অবাক হয় প্রশ্ন করে “বাবা, তুমি কোন গল্পের কথা বলছো?”




যুগ বৃদ্ধের উত্তর দিতে গিয়ে অতীতের স্মৃতিতে চলে যায়। তার মনে পড়ে গেলো সেই ঘটনা। যখন তার বয়স ছিলো দশ বছর। যখন সে তার বাবার সাথে কথা বলছিলো।


“বাবা বাবা, তুমি কি করছো?” যুগ আদুরে গলায় বাবাকে প্রশ্ন করলো।


“কিছু না সোনা। আমি গল্প লিখছি।” যুগের বাবা টাইপ করতে করতে বললো। 


“কি বললে? তুমি গল্প লিখছো বাবা? কি গল্প বাবা?”


“যক্ষিনীর কাহিনী সোনা।”


“বাবা আমাকে যক্ষিণীর কথা বলো না।”


“না বাবা তুমি এখন ছোটো আছো। যখন বড়ো হয়ে যাবে, তখন শুনবে কেমন?”


যুগের মন খারাপ হয়ে যায়। মন খারাপ করে বললো, “প্লিজ বাবা। বলো না। আমি ভয় পাবো না। বলো না। তুমিই তো বলো আমি বড়ো হয়ে গেছি বলো না।”


যুগ জিদ করতে থাকে।


তখন তার বাবা বাধ্য হয়ে যুগকে গল্প শোনাতে থাকে। তার বাবা বললো, “বলা হয় আমাদের যে কৃষ্ণই নদী আছে না। ওখানে বহুদিন ধরে যক্ষিনী নামক এক পিশাচিনী ঘুরে বেড়াতো।”


যুগ আশ্চর্য হয়ে বললো, “ওই বাংলামোড়া আর রংকামোচা গ্রামের মাঝে যে নদী আছে ওখানেই বাবা?”


“হ্যাঁ সোনা ওখানেই। এই যক্ষিনী যারা হয় না, তারা সবসময় জলের আশেপাশে থাকতেই পছন্দ করে। প্রতি অমাবস্যা ও পূর্নিমার দিন কোনো পুরুষ যখন নদী পার করতো, তখন সে নিজের রূপের মহিমায় পুরুষদের নিজের জালে ফাঁসিয়ে শিকার করতো। বলা হয়, যক্ষিনীদের পদ্ম ও চামেলি ফুল খুব পছন্দ। তারা সবসময় এই ফুলগুলো নিজের কাছে রেখে দেয়। 

ওই যক্ষিনী যাদের শিকার করতো, তাদের আগে কিছু মিক্স করে খাওয়াতো। 


“খাবার? কেন বাবা?”


“কারণ, ওই খাবারে নেশার দ্রব্য মেশানো থাকতো। যারাই ওই খাবার খেতো, তারাই যক্ষিনীর রূপে পাগল হয়ে যেতো। এই রকমই একবার এক পুরুষকে যক্ষিনী নিজের জালে ফাঁসিয়ে ছিলো। তারপর তার সাথে সংভোগ করে…”


যুগ সাথে সাথে প্রশ্ন করে, “এই সংভোগ কি বাবা?”


যুগের কথা শুনে তার বাবা চুপ হয়ে যায় এবং কথা ঘুরিয়ে বলে, “এইসব তোমার জন্য নয় সোনা। তুমি ছোটো আছো না। যখন তুমি বড়ো হবে তখন আমি এর মানে বোঝাবো। এখন গল্পে মনোযোগ দাও।”


“ঠিক আছে বাবা। তারপর কি হলো?”


“সংভোগ করে যক্ষিনী আসল রূপে ফিরে আসতো। যে আসল রূপ ছিলো খুবই ভয়ংকর। এতটাই ভয়ংকর যে, যে কারোরই ওই রূপ দেখলে সাথে heartfail হয়ে যাবে। এরপর যক্ষিনী ওই পুরুষের heart বের করে রক্ত চুষতো।”


“এই রকম কেন করতো বাবা? তাহলে কি সে খারাপ ছিলো?”


“না বাবা। যক্ষিনী খারাপ কখনোই ছিলো না। সে তো আসলে খুব ভালো ছিলো। সে একজন অপ্সরার মতো।”


“তাহলে পুরুষদের সাথে ওই কি যেন বলেছিলে ও হ্যাঁ সংভোগ করে কেন মেরে ফেলতো?” 


যুগের বাবা কিছু মনে করে বলে, “অভিশাপের কারণে বাবা।”


“কিসের অভিশাপ বাবা?”


“আসলে ওই অভিশাপ ছিলো…”


যুগের বাবা এইটুকুই বলতে গিয়েছিলো, তখনই তার মায়ের গলা বাইরে থেকে শোনা যায়, “যুগ বাবা, ও যুগ বাবা। খেয়ে নাও এবার।” 


যুগ আদুরে গলায় বললো, “না মা আমি এখন খাবো না। আমি এখন বাবার থেকে গল্প শুনবো।”


“কি বললি? গল্প শুনছিস? তোর বাবার গল্প লেখা আর শোনানো ছাড়া আর কোনো কাজ আছে? নিজে তো বিগড়েছেই তার সাথে তোকেও বিগড়াবে। চলে আয় শিগগির।”


“না মা আমি গল্প শুনবো।”


“কি আসবি না? তাহলে আমি যাই?”


যুগ বুঝে যায়, সময়ে না গেলে তার পিঠে মায়ের মার পড়বে। ততক্ষণে তার মা যুগের সামনে চলে আসে। যুগের মায়ের মুখ অস্পষ্ট ছিলো। কারণ, যুগ ছোটোবেলায় মা’কে সেইভাবে দেখেনি। তাই সে জানে না, মায়ের কথা। তার মায়ের সমস্ত কথাই মনে ছিলো কিন্তু তার মায়ের মুখ মনে নেই।


যুগ পুনরায় অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসে। যুগ যখন চোখ খোলে তখন দেখে ওই বৃদ্ধ যুগের হাত নাড়াচ্ছে এবং তাকে প্রশ্ন করছে, “কি হলো বাবা? তুমি ঠিক আছো?”


যুগ উত্তরে বললো, “কিছু না দাদু।”


“আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।”


“আচ্ছা দাদু, একটা প্রশ্ন ছিলো। ওই যক্ষিনী কি এখনও পুরুষদের শিকার করে?”