স্বপ্ন নাকি সত্য? Dream or reality?


আমি সুকান্ত হালদার, বাড়ি বাঁকুড়ায়। আমি জানি না, আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে কিনা। তবে, আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এমন কিছু ঘটনা শেয়ার করতে চাই, যা অবিশ্বাস্য বিষয়। সত্যিই আমার সাথে ঘটেছে নাকি আমার কল্পনা তা, পাঠকরাই বিচার করবেন।

বছর পাঁচেক আগের ঘটনা, আমি এক সন্ধ্যে অফিস থেকে বাড়ি ফিরছি। সাধারণত আমি 6.31 এর খরগপুর মেমু স্পেশাল ধরি। বাড়ি ফিরতে ফিরতে আমার, 8.30 বেজে যায়। কারণ, স্টেশন থেকে আবার অটো ধরে, কিছুটা পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়।

আমার বাড়ি প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত। তাই সামান্য অন্ধকার নামলেই মনে হয় যেন গভীর রাত। কয়েকটা ল্যাম্প পোস্ট মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর চারপাশে ক্ষেতজমি। আলের ধার দিয়ে গেলে আমার বাড়িটা সামান্য কাছে হয়, যদি আমি মেইন রোড ধরে যাই, তাহলে মোটামুটি কমপক্ষে 30 মিনিট লেগেই যায়। তাই সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে আর ঘুরে ঘরে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করে না। তাই আলের ধার দিয়েই বাড়ি যাই।

অভিশপ্ত বাড়ি || The Haunted House

সেদিনও আমি আলের ধার দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হচ্ছি। কেন জানি না, আমার মনে হলো, আমাকে কেউ ফলো করছে। সাথে সাথে পিছন ফিরে দেখি কেউ নেই।

হঠাৎ কিছুক্ষণ পরেই মনে হলো, কেউ যেন আমার নাম ধরে ডাকলো। আমি আবারও পিছন ফিরে দেখি, কেউ নেই।

কথায় আছে না, রাতে কেউ নাম ধরে ডাকলে, পিছন ফিরে তাকাতে নেই। আমি তাই-ই করে বসলাম, তাই হয়তো আমাকে এই পরিস্থিতির সম্মুখে পড়তে হয়েছে।

যাই হোক, সেই সময় আমি ভূত প্রেতের উপর অবিশ্বাস করতাম, ঠিক তা নয়, তবে যে আবার বিশ্বাসও করবো, তাও বলা ভুল। স্বাভাবিকভাবে কখনো বাড়ি যাওয়ার পথে এই রকম ভাবনা কখনো আসেনি। কারণ, আমি গত 13 বছর ধরে সার্ভিস করছি আর একই পথ ধরে বাড়ির দিকে যাই।

কিন্তু সেদিন এমন কেন ঘটলো, তা বুঝে উঠতে পারলাম না। আমাকে যখন নাম ধরে ডাকা হলো, মনে হলো, খুব চেনা কেউ আমাকে ডাকলো। চেনা বলতে প্রচন্ড চেনা, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলাম না, কে সে! কিন্তু এত চেনা গলা! তাই আমি হটাৎ করেই পিছনে তাকিয়ে ফেলেছিলাম।

পিছন ফিরে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবারও পথ চলতে লাগলাম। তখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলাম। সেই রকম কিছু মনে হয়নি। ভাবলাম, হয়তো আমার মনের ভুল।

মিনিট দুই এগোতেই হঠাৎ মনে হলো, প্রচন্ড জোড়ে হাওয়া বয়ে গেলো। ভাবলাম, ঝড় হবে বোধ হয় তাই, দ্রুত পথ চলতে লাগলাম। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো, সমস্ত কিছুই তো শান্ত, গাছের পাতা এক চুলও নড়ছে না। তাহলে কি আমি আবারও ভুল বুঝলাম!

বারংবার একই রকম ঘটনা আমাকে ভীতগ্রস্থ করে তুললো। ঠিক করলাম, পরের দিন আর এদিক দিয়ে যাবো না, মেইন রোড দিয়েই যাবো। দেরী হোক, তাও ভালো!

বাড়ি যেতে তখনও মিনিট 15 লাগবে।

আমি দ্রুত হাঁটতে লাগলাম। আর মনে মনে ভগবানের নাম নিতে লাগলাম। কিন্তু ভয় কিছুতেই কমছে না।

আবারও কিছুক্ষণ পর, মনে হলো, আমাকে আবার আমার নাম ধরে ডাকছে পিছন থেকে। না! এবার কোনো ভুল নেই। পরিষ্কার একটা মহিলা কণ্ঠ শুনতে পেলাম - “সুকান্ত!”

এত চেনা কণ্ঠ, তবু বুঝতে পারছি না, এটা কার?

এরপর আমি আর পিছনে না তাকিয়ে সোজা বাড়ি চলে এলাম।

বাড়ি এসে হাত মুখ ধুয়ে কিছুক্ষণ বাড়ির লোকের সাথে সময় কাটিয়ে, টিভি দেখে খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়লাম। বাড়ির আসার পর থেকে যতই নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করি না কেন, ভিতরে ভিতরে ওই নারী কণ্ঠই ভেসে আসছে বারে বারে।

অভিশপ্ত বাড়ি || The Haunted House

আমি শুয়ে শুয়ে বহুক্ষণ ধরে ভেবে চলেছি কার কণ্ঠ এটা! এত চেনা! এই ভাবতেই ভাবতেই আবারও একই কণ্ঠ শুনতে পেলাম, “সুকান্ত!” সাথে সাথে আমি লাইট জ্বালিয়ে বসে পড়লাম। স্ত্রী আমাকে দেখে বললো, “কি হলো গো? হঠাৎ বসে পড়লে? শরীর ঠিক আছো তো? তুমি তো ঘেমে নেয়ে উঠেছো! তোমার কি হয়েছে গো?”

স্ত্রী আমাকে দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে মনে হলো। আমি তাকে সান্তনা দিয়ে বললাম, “কিছু হয়নি। একটা খারাপ স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে গেলো। ঘুমিয়ে পড়ো শান্ত হয়ে। কিছু হয়নি আমার।”

আবার লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

হঠৎ ঘুম ভাঙলো, মেঝের উপর খালি পা’য়ের শব্দ শুনে! খসখসে পায়ের শব্দ!

আমি অন্ধকারেই ভীতগ্রস্থ হয়ে বললাম, “কে? শান্তনা?” (শান্তনা আমার স্ত্রী’র নাম)

কোনো শব্দ পেলাম না। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, “শান্তনা কি? কথা বলছো না কেন?”

আমি বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবো, এমন সময় খেয়াল এলো, আমার পাশেই তো স্ত্রী শুয়ে রয়েছে। তাহলে......


আমি এই রকম ভয় কোনোদিন পায়নি। আমি শান্তনাকে তাড়াতাড়ি ডেকে তুললাম। আমার এই রকম ডাক শুনে সাথে সাথে সে’ও ভয় পেয়ে যায় এবং বলে, “কি হয়েছে গো?”

আমি বললাম, “ওখানে কে গো?”

স্ত্রী বললো, “কোথায় কে? তুমি কি বলছো?”

আমিও পরক্ষণে কিছুই বুঝতে পারলাম না। সাথে সাথে বললাম, “তুমি লাইট জ্বালাও তো দেখি।” ফোনের টর্চ দিয়ে প্রথমে লাইট জ্বালিয়ে তেমন কিছুই দেখতে পেলাম না, আমি সাহস করে ঘরের লাইট জ্বালালাম। ভালো করে পুরো ঘরটা দেখলাম, কোথাও কেউ নেই।

আমি আবার লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম, বুঝতেই পারিনি।


সকালে স্ত্রী’র ডাকে ঘুম ভাঙলো।


অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না। রাতে ঠিক করে ঘুম হয়নি। সারাদিন আমি বাড়িতেই কাটিয়ে দিলাম। সেদিন রাতে তেমন কোনো ঘঠনা ঘটেনি। পরেরদিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে মেইন রোড দিয়ে বাড়ি ফিরেছি, এতে 15 মিনিট বেশি হাঁটতে হয়। তবু আমি ওই পথ দিয়েই বাড়ি ফিরেছি। অন্তত মেইন রোড দিয়ে গেলে একটা দুটো লোক দেখা যায়, এতে মনে সাহস পাওয়া যায়। আলের উপর দিয়ে গেলে তো কোনো লোকই দেখতে পাওয়া যায় না।


যাই হোক, সেদিন রাতেও কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রায় সপ্তাহ খানেক এই রকম ঘটনা না ঘটায় মনে মনে নিশ্চিন্ত হলাম যে, ওই সমস্ত ঘটনা ছিলো মনের ভুল।

যেমন ভাবনা, তেমন ফল। সাথে সাথে আমার ভাবনাকে ভ্রান্ত করে এবার একদম বাঁ কানের কাছে এসে সেই মহিলা কণ্ঠ শুনতে পেলাম এবং স্পষ্ট শব্দ ““সুকান্ত!”

দুই বান্ধবীর সাথে দীঘায়  || পর্ব - 2 || At Digha with two friends - Part 2

তখন রাত আট’টা বাজে। আমার ছেলে মেয়েরা ওদের ঘরে পড়াশোনা করছে। স্ত্রী ওদের ঘরে গিয়ে পড়াচ্ছে। আর আমি এই ঘরে টিভি দেখছি। আর আমার মা বাবা সামনের ঘরে বসে রয়েছে, নিজেদের মতো গল্প করছে।


আমি বারংবার ভেবে চলেছি, এই কণ্ঠটা কার? এত চেনা কণ্ঠ! বারংবার এই রকম ঘটনা আমার সাথে ঘটছে। ঠিক করলাম, এই কথাটা আমার স্ত্রীকে বলবো।

আমি শান্তনাকে ডাকলাম, সাথে সাথে সে চলে এলো।

বললো, “হ্যাঁ বলো, কি বলছো?”

আমি সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম, আমার সাথে সপ্তাহ খানেক ধরে যা যা ঘটনা ঘটেছে।

দেখলাম, আমার কথা শুনে সেও ভীতগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। সে বললো, মা বাবা’র সাথে একবার পরামর্শ করলে ভালো হয়।

আমি আর শান্তনা, মা বাবার ঘরে গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম।

মা প্রথমে বাবার দিকে তাকালো, তারপর, বাবা বললো, “এখানে বস!”

আমি বাবার কাছে গিয়ে বসলাম। বাবা বললো, “তোকে আমি একটু পরেই ডাকতাম। তুই এই মাদুলিটা পড়ে নে। তোর মা এক ওঝার থেকে নিয়ে এসেছে।”

আমি বললাম, “তোমরা জানলে কি করে যে, আমার সাথে এইগুলো ঘটছে?”

বাবা বললো, “তুই যে সেদিন, তুই পিছন ফিরে তাকিয়েছিস, তা তোর মা ভালো মতোই বুঝতে পেরেছে। আমি তো এইসব কথায় বিশ্বাস করি না। কিন্তু প্রমাণ দেখানোর জন্য, তোর মা যা দেখালো, তাতে বিশ্বাস না করে উপায় কি!”

সেদিন তুই হাত মুখ দিয়ে যখন ঘরে ঢুকলি, তখন তোর মা গেট খুলে দিয়েছিলো না? তখনই তোর মা বুঝতে পারে যে, তোর সাথে কেউ এসেছে। কারণ, তুই ঢোকার সাথে সাথে একটা অদ্ভুত রকমের হাওয়া ঢোকে ঘরে মধ্যে। যা স্বাভাবিক ছিলো না। প্রথমদিকে তোর মা এই ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু তোর মা তোকে সবসময় চোখে চোখে রেখেছে। সেদিন রাতে তোর ঘুম ভেঙে যাওয়া, তোর কানের কাছে এসে তোর নাম ধরে ডাকা, এই সমস্ত কথা তোর মা’ও শুনতে পেয়েছিলো।

আমাকে যখন তোর মা এইগুলো বলতে এলো, আমি তো বিশ্বাস করিনি। তোর মায়ের কথা শুনে যখন তোদের ঘরে ঢুকলাম, তখন দেখি তুই আর তোর বউ লাইট জ্বালিয়ে কি খোঁজাখুঁজি করছিস। তোদের আর ডিস্টার্ব করিনি।

পরেরদিনই আমরা দুজন মিলে এখানকার এক ওঝার কাছে গিয়েছিলাম, আমাদের বললো, বাড়ির উঠোন থেকে এক মুঠো মাটি নিয়ে আসতে। আমরা আর দেরী না করে, সেদিনই মাটি নিয়ে গেলাম ওঝার কাছে। বাকিটা তোর মা বলবে।”

আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। বললাম, “কি হলো তারপর?”

মা বললো, “তোর সাথে খুব চেনা বা খুব কাছের কোনো অশুভ শক্তি তোর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এসেছে। তুই কি করেছিস বাবা?”

মা কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লো।

আমি বললাম, “আমি তো জানিই না, আমি কি করেছি?”

মা বললো, “তুই কি কোনো অবৈধ সম্পর্ক রেখেছিলি?”

মা’য়ের কথা শুনে হঠাৎ মনে পড়ে গেলো, দু-তিন মাস আগের ঘটনার কথা।

জামাইবাবুর সাথে জীবন কাটাতে হবে প্রিয়াঙ্কাকে? Will Priyanka have to spend her life with her husband?

অফিসে বসে কলিগদের সাথে আড্ডা ইয়ার্কি চলছে। এমনই সময় একজন যুবতী এসে, আমাকে বললো, “স্যার, অ্যাকাউন্ট মিসম্যাচ হচ্ছে, Please help me. “ যুবতীয় প্রচন্ড ভীতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে যেহেতু অ্যাকাউন্ট মিসম্যাচ হয়ে গিয়েছে।

আমি সাথে সাথে ওর কাউন্টারে গিয়ে বসলাম, প্রায় মিনিট পনেরো সময় লাগলো অ্যাকাউন্ট ঠিক করতে।

মেয়েটির নাম অলিভা। সবেমাত্র তিনদিন হয়েছে আমাদের অফিসে জয়েন করেছে।


এই অবধি এখনও ঠিক ছিলো, কিন্তু কেন জানি না, অলিভার সাথে আমার সম্পর্ক ধীরে ধীরে ঘনিষ্ট হওয়া শুরু করলো। কারণ, অ্যাকাউন্ট রিলেটেড যে কোনো ধরনের সমস্যা হলেই আমার সাহায্য চাইতে আসতো সে। ধীরে ধীরে অ্যাকাউন্ট রিলেটেড সমস্যার সাথে সাথে পার্সোনাল প্রবলেমও আমার সাথে শেয়ার করা শুরু করলো। ধীরে ধীরে আমরা হয়ে উঠলাম বেস্ট ফ্রেন্ড।

আমি নিজেরও খারাপ লাগতো এত ঘনিষ্ট হতে। কারণ আমি কোথায় 45 বছরের বুড়ো, আর সে কোথায় 29-30 বছরের যুবতী।

কিন্তু আমিও যেন তার মোহের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়লাম। ইচ্ছে না থাকতেও কেন জানি না, তাকে অস্বীকার করতে পারলাম না। সকলের অজান্তে আমাদের মধ্যে তৈরী হলো এক গোপন সম্পর্ক। যার কোনো ভবিষ্যৎ ঠিকানা নেই। কারণ, আমি একাধারে বিবাহিত, অপরদিকে দুই সন্তানের পিতা আমি।


কিন্তু এত ঘনিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও গর্বের সাথে বলতে পারি, কখনো সুযোগের সৎ ব্যবহার করিনি। অলিভা বহুবার চেষ্টা করেছে অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার কিন্তু আমি নিজেকে সামলে নিয়ে তাকে সবসময় সঠিক পথে চলার প্রেরণা দিতাম।

হয়তো আমি সিগারেট খেলে, সেও চলে আসতো আমার সঙ্গী হতে। বহুবার বারণ করা সত্ত্বেও তাকে সিগারেট ও মদ্যপান থেকে দূর করতে পারিনি। মদ্যপ অবস্থায় বহুবার সুযোগ পেয়েও সুযোগের সৎ ব্যবহার করিনি।

আজ সারাদিন গেম খেলে কাটিয়ে দিলাম - Today I spent the whole day playing games

কিন্তু মাস খানেক পরে, সে আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। বহুবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, আমি বিবাহিত। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এই মাস খানেক আগে শুনলাম, ব্রেন স্ট্রোক হয়ে মারা যায়। সেই সময় আমরা শোক প্রকাশ করেছিলাম যে এত অল্প বয়সের মেয়ে ব্রেন স্ট্রোকে মারা যায়!


আমি মিনিট কয়েক আগে’ও সেই ভাবনায় ভেসেছিলাম। কিন্তু মায়ের কথা শুনে, এখন আমার মনে হচ্ছে, ওই চেনা কণ্ঠ তাহলে অলিভার! আমি বারংবার ভেবে চললাম, ওর এই কণ্ঠটা আমার কিছুতেই মনে পড়ছিলো না! মনে পড়বেই বা কি করে! আমি তো জানি ওর নর্মাল ডেথ হয়েছিলো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ও স্যুইসাইড’ই করেছে। এর উত্তর ভগবান জানেন আর জানেন হয়তো ওই ওঝা!

মা আবার’ও কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললেন, “কি রে বললি না? তুই কি কোনো পরকীয়ায় জড়িয়েছিলি?”

আমি স্ত্রী’র দিকে তাকালাম, দেখলাম সে আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। নিষ্পলক দৃষ্টিতে সে যেন বোঝাতে চাইছে, আমি যেন অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছি। বাড়িতে স্ত্রী থাকতে আমি পরকীয়া করেছি। কিন্তু আসল সত্য তো আমি জানি।

আমি মোটামুটিভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে, সেই মেয়েটার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিলো না। এমনকি আমি নিজেও জানি না, সে সুইসাইড করেছে কিনা। কারণ, আমরা সবাই জানতাম, সে ব্রেন স্ট্রোকে মারা যায়।

কিন্তু আমি তাদের আচরণে বুঝলাম, কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে, মাদুলি নিয়ে উপরের ঘরে চলে এলাম এবং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে অন্ধকারে, মাদুলিটা এক পাশে, আস্তে আস্তে বললাম, “অলিভা! তুমি কি চাও এখন? আমাকে কি নিয়ে যেতে এসেছো? তুমি যখন বেঁচে ছিলে, তখনও বলেছিলাম, আমি বিবাহিত। তোমাকে বারংবার বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমার কোনো কথা শোনোনি। আমি তো কোনোদিন তোমার সুযোগ নিইনি! না তোমার কোন ক্ষতি করেছি! তাহলে কেন আমার সাথে এই রকম করছো?”

কোনো উত্তর পেলাম না।


বহুক্ষণ ধরে অপেক্ষায় ছিলাম, যদি সেই কণ্ঠ পুনরায় ফিরে আসে। কিন্তু এলো না। প্রায় 30 মিনিট পর, ঘর থেকে বেড়িয়ে এলাম। সকলে আমার থেকে যেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এবার আমি রাগান্বিত হয়ে সমস্ত কিছু আবারও পুনরায় বোঝানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু লাভ তেমন কিছুই হলো না।


পরের দিন, আমি মায়ের সাথে ওই ওঝার কাছে গেলাম এবং আমি সমস্ত কিছু বললাম। কিন্তু ওঝার কথা শুনে, আমি আর মা হতবাক হয়ে যাই।

আসলে আমি যার কথা বলছি, অলিভা, সে আসলে আমার সাথে আসেনি। তার মানে সে সত্যিই ব্রেন স্ট্রোকে মারা যায়। ওঝার কথা অনুযায়ী, আমি এমন কোনো এক মহিলার প্রিয় কোনো বস্তু হয়তো নিয়ে এসেছি। যার প্রতি মোহ সে এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরজন্যই সে আমার কাছে এসেছে। কিন্তু বস্তুটা যে কি, তা তিনি বলতে পারবেন না।

এর সমাধানের উপায়ের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয় আমি রাস্তা থেকে কোনো কিছু কুড়িয়ে নিয়ে এসেছি, অথবা, আমাকে কেউ কিছু উপহার হিসেবে সেই বস্তুটা দিয়েছে অথবা আমি সেই বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ঘরে নিয়ে এসেছি, তা চুরিও হতে পারে।

চুরি তো আমি করিনি এখনও পর্যন্ত, রাস্তা থেকেও কোনো কিছু তুলে আনিনি এইকদিন যাবৎ। আমি উপহার পাওয়ার কথা ভাবতেই চমকে উঠলাম এবং ভীতগ্রস্ত হলাম, কারণ, কদিন আগেই আমার বন্ধু সমরেশ আমার মেয়ের জন্য একটা পুতুল উপহার দিয়েছিলো।

আমি তৎক্ষণাৎ ওঝাকে সেই বিষয়ে জানাই, এবং তিনি আমাকে একটি পাথর দিয়ে বললেন, এখুনি ঘরে গিয়ে পুতুলের মধ্যে দিয়ে দিতে।

কিন্তু বাড়ি গিয়ে দেখি, মেয়ে আমার ওই পুতুল নিয়েই খেলছে এবং মেয়ে আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে রয়েছে, যা আমি জীবনে কখনো দেখিনি।

আর ওঝার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা বাড়ির কারো সাথে শেয়ার করিনি।

আমি আর মা খুব স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম এবং আমরা যে যার ঘরে ঢুকে পড়লাম।

সেদিন রাতে, কেন জানি না হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায়। অন্ধকারের মধ্যেও একটা ছায়ামূর্তি দেখতে পেলাম। চোখ মুখ কিছু বোঝা যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে সে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি সাথে সাথে ওঝার দেওয়া পাথর দেখাতেই ছায়ামূর্তি উধাও হয়ে যায় এবং হনুমান চালিশার বই নিয়ে, মেয়ের পড়ার ঘরে ঢুকে পুতুলটাকে খোঁজার চেষ্টা করলাম। হঠৎ পিছন ফিরে দেখি, মেয়ে বড়ো বড়ো চোখ করে বললো, “তুমি আমার ঘরে কি করছো? নিজের ঘরে যাও।”

এই রকম কথা মেয়ের থেকে কখনও শুনিনি, সাথে সাথে আমার মনে হলো, নিশ্চয় আমার মেয়েকে ওই আত্মা বশ করেছে। সাথে হনুমান চালিশার বইটাকে তার মাথায় ঠেকিয়ে দিলাম। সাথে সাথে মেয়ে দেখি অজ্ঞান হয়ে যায়। আমি দ্রুত ওই পুতুলটাকে খোঁজার চেষ্টা করি।

কিছুক্ষণ পরেই খেয়াল করলাম, টেবিলের তলায় পুতুলটা পড়ে রয়েছে।

সেই সময়তেই ঘর অন্ধকার হয়ে যায়। সমস্ত রকম বাধা আসতে থাকে। শরীরের সমস্ত শক্তি যেন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে, চিৎকার করার ব্যর্থ চেষ্টা করে গেলাম। কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না। কখন যে জ্ঞান হারালাম, বুঝতেই পারিনি।

জানি না, এ ভগবানের লীলা কিনা!

যখন আমার জ্ঞান ফিরলো, তখনও দেখি চারিপাশে অন্ধকার ঘনিয়ে রয়েছে। আমি অন্ধকারের হাতড়াতে পুতুলের কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। পুতুলটিকে ছোঁয়া মাত্রই মনে হলো, কোনো এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে দূরে সরিয়ে নিতে চাইছে। কিন্তু আমি একাধারে গায়েত্রী মন্ত্র জপ করে চললাম এবং এক হাতে হনুমান চালিশা ও অপর হাতে পুতুলটাকে কাছে এনে, বহু কষ্টে পকেট থেকে পাথরটাকে পুতুলের সাথে ঠেকাতেই একটা বিকট আর্তনাদ শুনতে পেলাম।

প্রেমের ফাঁদে রহস্য || The mystery of the trap of love 

কিছুক্ষণের মধ্যেই অদ্ভুতভাবে লাইট জ্বলে উঠলো। পুতুলটার দিকে তাকিয়ে দেখি, পুতুলটা ভস্ম হয়ে গিয়েছে।

মেয়ে মেঝের উপর পড়ে ছিলো, জ্ঞান ফিরে বললো, “কি হয়েছে বাবা? আমি এখানে কেন?”

আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে, কাছে টেনে গলা জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লাম।

কিছুক্ষণের মধ্যে মা বাবা স্ত্রী সকলে আমার কাছে এসে পুরো ঘটনা জানতে চাইলো।


আমি কিছু বলার আগেই দেখলাম আমার ফোনে রিং বেজে চলেছে। ফোন ধরার চেষ্টা করছি, তবু কেন জানি না ধরতে পারছি না। স্ত্রী আমাকে ঝাঁকুনি দিয়ে বললো, “ওঠো, কি ঘুমাচ্ছো সেই তখন থেকে! অ্যালার্ম বাজছে তো, শুনতে পাও না নাকি! অফিস যাবে তো?”

একটানা স্ত্রী আমায় বলে গেলো।


কিন্তু আমি ভেবে চললাম, আমার সাথে তাহলে এতক্ষণ ধরে যা কিছু ঘটলো, সমস্ত কিছুই স্বপ্ন ছিলো! তা কি করে হয়? কাল রাতে যে আমাকে কোনো এক শক্তি ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়, যার ফলস্বরূপ যে ব্যথা অনুভব করি, তাও আর নেই।


আমি স্ত্রীকে সমস্ত কিছু বললাম। সে জানায়, কাল রাতে তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি, এখন ঘুম থেকে উঠলাম!

কিন্তু এ কি করে সম্ভব!


দুই সপ্তাহের ঘটনা একসঙ্গে স্বপ্নে চলে এলো!


সেদিন আমি সারাদিন এইভাবে কাটালাম। রাতে বাড়ি ফেরার সময় আমি আলের ধার দিয়েই বাড়ি আসার কথা ভাবলাম। কিন্তু হঠাৎ কেন জানি না, মনে হলো, আমাকে কেউ ফলো করছে। সাথে সাথে আমার স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যায়। তাই আমি আর পিছন ফিরে না তাকিয়ে মেইন রোড ধরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাই।

সেদিন রাতে আর কিছু হয়নি। তবে আমি স্বপ্নে দেখা সেই ওঝার সাথে দেখা করতে বেড়িয়ে পড়লাম পরের দিন সকালে। আজ ছুটি নিয়েছি অফিসে। স্বপ্নে যে স্থানে দেখে ছিলাম ওঝার স্থান, ঠিক সেইখানেই রয়েছেন ওঝা!

আমি তাঁর কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা বলি, এবং তার থেকে যা জানতে পারি, তা শুনে আমি হতবাক হয়ে যাই। তাঁর কথায়, আমাকে তিনি বহুবার দেখেছেন, কখনো রাস্তায়, কখনো ট্রেনে কখনো বা বাসে। অধিকাংশ সময় তিনি আমাকে ফলো করতেন।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, আমার সাথে কোনো অশুভ শক্তি সর্বদা জড়িয়ে রয়েছে। যার কারণে তার মন্ত্রবলে, আমাকে সমস্ত ঘটনা স্বপ্নের মাধ্যমে পূর্বাভাস দিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে সাবধান করার জন্য। কারণ, তিনি জানতেন, আমাকে যদি তিনি সেই সময় এই সমস্ত ঘটনা বলতেন, তাহলে আমি বিশ্বাস করতাম না। তাই আমাকে সমস্ত ঘটনা স্বপ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দেন।

আমি ওঝার থেকে সমস্ত কথা শুনে ভাবলাম, বাড়ি চলে আসি। কিন্তু তখন দেখলাম, অফিসে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি রয়েছে। কারণ, ট্রেন ঢুকতে এখনো দশ মিনিট বাকি। তাই ভাবলাম, টিফিন অফিস থেকেই করে নেবো। এতবার অফিস কামাই করে লাভ নেই।

সুতরাং যথারীতি আমি অফিসে পৌঁছে যাই। টিফিন পিরিয়ডে, অমিতাভ আমার কাছে উপহার কাগজে মোড়ানো প্যাকেট নিয়ে আমাকে বললো, “অনেকদিন তো তোর বাড়িতে যাইনি। তোর মেয়েকে আমার তরফ থেকে এই গিফটা দিয়ে দিস।”


এই কথাগুলো প্রচন্ড চেনা মনে হলো। হঠাৎ মনে পড়লো, কাল রাতের স্বপ্নে কথা। অমিতাভ তো এই গিফ্টই দিয়েছিলো, যার মধ্যে পুতুল ছিলো। আমার মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেলো, “এর মধ্যে কি পুতুল রয়েছে?”

অমিতাভ’র মুখ দেখে মনে হলো, সে বোধ হয় এই প্রশ্নবানে অপ্রস্তুত ছিলো। সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, “হ্যাঁ রে, তুই জানলি কি করে?”

আমি আর কোনো উত্তর না দিয়ে সাথে সাথে বেড়িয়ে পড়লাম। মনে মনে ভাবলাম, সকাল থেকে অমিতাভকে তো অফিসে দেখিনি। তাহলে হঠাৎ টিফিন পিরিয়ডে এলো কি করে?

আমি আমার বাকি কলিগদের কাছে অমিতাভ’র কথা বললে, তারা শোক প্রকাশ করে জানায়, অমিতাভ গত রাতেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়। সে তার স্বপরিবার নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পিছন থেকে এক ট্রাকের ধাক্কায় তার পরিবারের সকলে মারা যায়।

আমি যখন তাদের টিফিন পিরিয়ডের কথা জানাই, তারা নিজেরাই হতবাক হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে কেউ একে ভৌতিক ঘটনা বলে আখ্যা দেয়, কেউ বা আবার মনের ভুল বলে ব্যাখ্যা দেয়।

জামাইবাবুর সাথে জীবন কাটাতে হবে প্রিয়াঙ্কাকে? Will Priyanka have to spend her life with her husband?

আমি আজ আর বেশি রাত না করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসি এবং সমস্ত ঘটনা সেই ওঝাকে গিয়ে বলি। তিনি আমাকে একটা তাবিজ দিয়ে বললেন, “এটা সবসময় পড়ে থাকবে। তোমার বন্ধু কিন্তু তোমাকে সহজে ছাড়বে না। কারণ, তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মারা গিয়েছে। যার জন্য তার সন্তানকে পুতুলের দ্বারা তোমার মেয়ের শরীরে বাসস্থান করতে চেয়েছিলো। তুমি এই তাবিজটা পড়ে থেকো সবসময়। সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”

আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমি না হয় তাবিজ পড়লাম, কিন্তু বাড়ির লোক তো পড়ছে না। তাহলে তো তাদের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু তার উত্তরে তিনি জানান, মৃত আত্মা আমার দ্বারাই বাড়িতে প্রবেশ করবে। তাই আমার তাবিজ পড়াটা প্রয়োজন। কখনো শরীর থেকে তাবিজ বিচ্ছিন্ন না হয়, সেইদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়।

সেই থেকে ওই তাবিজ আজও আমি তাবিজ পড়ে থাকি।


আমি আজও এর সঠিক উত্তর জানি না। আমার সাথে সাথে যা ঘটনা ঘটেছে, তা কি সত্যিই সম্ভব? নাকি সমস্ত কিছুই আমার কল্পনা? নাকি তান্ত্রিকও আমার সাথে ছল করছে? আপনাদের কি মনে হয়?


ভাগ্নীর সাথে দারুণ আনন্দ করলাম - পর্ব -1 || I visited my sister's home - Part 1


সুকান্ত হালদার, তার জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনিও চাইলে আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত ঘটনা শেয়ার করতে পারেন। আপনার ঘটনা শেয়ার করুন আমাদের যোগাযোগের বক্সের মাধ্যমে অথবা ইমেলের মাধ্যমে।

Email id - aray7485@gmail.com